Recent in Technology

Responsive Advertisement

“ক্ষুধার্ত থেকো, বোকা থেকো.. তবেই এগোবে.. (স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টীভ জবসের অবিস্মরনীয় বক্তৃতা)

স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টীভ জবসের অবিস্মরনীয় বক্তৃতা 


 

বিশ্বের অনত্যম জনপ্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৫ এর সমাবর্তনে নিজের জীবনের ৩টি গল্প সংলগ্ন  ভাষণে সকলকে, বিশেষত ছাত্রছাত্রী দের নবউদ্দীপনায় অনুপ্রাণিত করে তোলেন প্রযুক্তির ইতিহাসে অন্যতম সফল উদ্যোক্তা এ্যপলএর স্রষ্টা স্টীভ জবস।

 

প্রথম গল্প

“Connecting the Dots”


বিন্দু
গুলিকে যোগ করা।

এই গল্পটিতে জবস জানান. তিনি ছিলেন তার বাবা-মার পালিত সন্তান যারা কেউই কলেজ গ্র্যাজুয়েট ছিলেননা, তাই তারা সংকল্পবদ্ধ ছিলেন যে  স্টীভ-কে তারা একটি নামী কলেজে পাঠিয়ে পড়াশুনা করাবেন স্টীভের উপযুক্ত বয়স হওয়ার পর সারাজীবনে অর্জিত প্রায় সমস্ত পুজি ব্যয় করে তারা নিজেদের ইচ্ছাপূরণ করেন। কিন্ত কলেজে গিয়ে স্টীভ খেয়াল করেন সেখানে যেসমস্ত বিষয় গুলি পড়ানো হচ্ছিল, সেগুলিতে তার একেবারেই আগ্রহ নেই। তিনি ভেবে দেখলেন সেখানে পরে থেকে তার আদৌ কোনো লাভ বা উন্নতি হওয়ার নয়, তাই দেরী না করে সেই মুহুর্তে তিনি সিদ্ধান্ত নেন যে কলেজ তিনি ছাড়বেন। উল্লেখ্য তারপরেও তিনি কখনও গ্র্যাজুয়েট হওয়ার তাগিদ বোধ করেননি বা বলা যায় তার সে প্রয়োজন পরেনি কলেজ ছাড়ার পরের পথটা মোটেই মসৃণ ছিলনা, অত্যন্ত কষ্টের মধ্য দিয়ে কারো উপর নির্ভর না করে সম্পূর্ন নিজের দায়িত্বে তিনে এগিয়েছিলেন সেই সময় তিনি সঠিক ভাবে জানতেন না যে এরপর তিনি কি করবেন, তাই বেশি না ভেবে তিনি সেটাই করলেন যেটা তার মন বলল ঠিক এবং ভাল বিষয় উদাহরণ স্বরূপ তার একেবারে হঠাৎ করেই (অক্ষর লেখনের শৈল্পিক পদ্ধতি শেখার এবং সে সম্পর্কীয় গভীর অনুরাগের  কথা তিনি উল্লেখ করেন। তার মাথায় এই খেয়ালটা ছিলনা সেইসময় যে এটি ভবিষ্যতে কীভাবে তার কাজে লাগতে পারে, কিন্তু তা সম্পূর্ণ নিষ্ঠা নিয়েই শেখার কাজটা তিনি করেছিলেন। তখন যদিও জানতেনা, কিন্তু ১০ বছর বাদে নিজের কোম্পানীতে ...  Macintosh Computer বানানোর  সময় তিনি লক্ষ্য করেন সেই সময় অবধি কম্পিউটারে লেখার জন্য মাত্র এক ধরনের হরফ ছিল যেটি মোটেও সুন্দর ছিলনা সেই সময় তিনি নিজের ক্যালিগ্রাফিক  জ্ঞান কে কাজে লাগালেন, এবং শুধুমাত্র তার চেষ্টার ফলস্বরুপ সারাবিশ্বের কম্পিউটার সুন্দর অসাধারণ হরফ বা টাইপ ফেস (ফন্ট) এর সম্ভার পেল।

তিনি বলেছেন যে জীবনে কোনও শিক্ষাই বৃথা যায়না, যদি শেখাটা ভাল হয়, তাহলে কোন না কেনা সময় তা কাজে লাগেই এই শিক্ষার বিন্দ গুলো যোগ করেই ১টা সফল কর্মজীবন আসে. ভবিষ্যতের রাস্তা তৈরি হয় শুধু বিশ্বাস করতে হবে নিজের উপর, সেই বিন্দু গুলোর উপর বা অন্তত ভবিষত্যেও উপর, যা ভরসা যোগায় নিজের মনের কথা শুনতে।  উনার ভাষায় ………….

You can’t actually connect the dots looking forward, you can only connect them looking backwards your life”

--------Steve Jobs--------

 

২য় গল্প

“Life & Love”


 “জীবন
ভালবাসা

মাত্র ২০ বছর বয়সে নিজের বাবা-মা এর গ্যারেজে কয়েকজন বন্ধু কে তিনি “apple” শুরু করেন এবং ১০ বছরের মধ্যে কোম্পানী বিপুল খ্যাতি বাণিজ্যিক সাফল্য পায় স্টীভ নিজেকে ভাগ্যবান মনে করেছেন যে তিনি যা ভালবাসেন সেই কাজই পেশা হিসেবে করছিলেন। কিন্তু তার ৩০ বছর বয়সে এবং  Macintosh বানানোর মাত্র কিছুদিন পর তাকে তার নিজের বানানো কোম্পানী থেকে বহিস্কার করা হয় । ঘটনাটি অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি কোম্পানীর কল্যানার্থ্যে তিনি নিজে যে বোর্ড অফ ডিরেক্টরস নিয়োগ করেছিলেন, তাদের সিদ্ধান্তেই্ সারা দুনিয়া সামনে নিজেরই কোম্পানী থেকে বেরিয়ে যেতে হয় তাকে। এই ঘটনায় অপমানের থেকেও বেশী অবসাদ এসেছিল তার শুরু দিকে, কিন্তু তিনি কখনই থেমে থাকেননি। তিনি সেই সময়ও উপলব্ধি করেন যে  হয়ত তিনি “apple” এর বাইরে বেরিয়ে গেছেন, কিন্তু তখনও নিজের কাজকে তিনি ভালবাসতেন তাই নিজের পথ তিনি হারাননি, এগিয়ে চলেছেন। তিনি জানিয়েছেন যে প্রাথমিক ভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন সেই ঘটনায়, কিন্তু পরে তিনি আবিস্কার করেন যে, শাপে বর হয়েছে অর্থাৎ “apple” থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরের দিন গুলো তার জীবনে সবচেয়ে সৃজনশীল সময়  হিসেবে কেটেছে। সেই ঘটনার পর তিনি “Next” তারও পরে   “Pixar” নামের কোম্পানী বানান যা বিশ্বের প্রথম কম্পিউটারাইজড অ্যানিমেটেড ছবি The Toy Story  দর্শকদের উপহার দেয়। Pixar Animation আজ বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ অ্যানিমেশন স্টুডিও “apple” থেকে বহিস্কৃত হওয়াটাএকটি বিদঘুটে স্বাদের  ওষুধ ছিল কিন্তু সেটা রুগীর দরকার ছিল: এটা স্টীভ এর এক অকপট স্বীকারোক্তি তার মতে ওই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে তিনি যে এগোতে পেরেছিলেন তার একটাই কারন, তিনি নিজের কাজ টাকে শ্রদ্ধা করতেন এবং ভালবাসতন পূর্ববর্তী সাফল্যের বোঝ, তার কাছে, পুনরায় একজন নবাগতের তেজ ফুরফুরে মেজার দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়েছিল মানুষের জীবনের অনেকটা জুড়েই তার কাজ থাকে, নিজের কাজে সন্তুষ্ট হওয়া সম্ভব যখন কাজ টিকে ১টি ভাল-কাজ বলে মনে হয়, আর ভালকাজ তখনই করা সম্ভব যখন কাজটিকে ভালবাসা যায়। এটি মনের ব্যাপার, ডাক এলে নিজে থেকেই বোঝা যায়, তাই সেই কাজ টাই করা উচিৎ যার প্রতি ভালবাসা আসে, যদি সেই কাজ এখনও অবধি খুজে না পাওয়া যায়, তাহলে খুজতে থাকাই ভাল, থেমে গেলে ক্ষতিই হয়, এটাই উনার মতামত।

 

৩য় গল্প

                                               “Death”


 

“মৃত্যু

তিনি জীবনে নানা চরাই উতরাই দেখেছেন, এবং সেই সবকটিকে পেরিয়ে আজ তিনি জগত বিখ্যাত। কীভাবে নিজের জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গুলি নিয়েছেন সে বিষয় বলতে গিয়ে তিনি একটি  অসাধারণ প্রশ্নের উল্লেখ করেন যা তিনি নিজেকে বারংবার করেছেন প্রশ্নটি হলযদি আজ আমার জীবনে শেষ দিন হয়, আমি কি সেটাই করতে চাই যা আমি এমনিতে আজ করতে চলেছি?” আর এই প্রশ্নের উত্তর একাধিক বারনাহওয়াতে তিনি বুঝতেন যে কিছু বদলানো দরকার নিজের অদ্ভুত সাবলীল ভাষায় তিনি বলে চলেন যে, সত্যিই জীবন টা খুবই অনিশ্চিত যেখানে আমাদের প্রত্যেককেই মৃত্যু কে বরন করতে হয়, আমরা কেউ সেটা থেকে পালাতে পারিনা, অথচ আমরা কেউই মরতে চাই না আমাদের মৃত্যু খুব দুরে নয়, এটা জানলে আমরা জীবনের কঠিন বড়ো সিদ্ধান্ত গুলো নির্বঘে নিতে পারি, কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় না পেয়ে। আামাদের জীবন  ইতিমধ্যেই খুব আলগা , তাই কোন কারন নেই নিজেদের  মনের কথা না শোনার, প্রাণ খুলে না হাসার বা নিজেকে না ভালবাসার আমাদের সকলেরই সময় নির্দিষ্ট, তাই অন্য কারোর মত জীবন যাপন করার কোন মানেই হয়না, এমন কোন ধারনা নিয়ে বাচা যায়না যা অন্য কারো চিন্তাভাবনার ফলপ্রসু, অন্য কারো মতামতের  আওয়াজ এতটাও কানে নেওয়া উচিত না যার জন্য নিজের ভেতরের আওয়াজ শোনা না যায়। জীবন টা অন্য কারোর নয়, নিজের, তাই মনের কথা শোনার সাহস থাকা খুব দরকার, আমাদের মন আগে থেকেই জানে যে আমরা কীরকম মানুষ হতে চাই।

স্টীভ নিজে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার আক্রান্ত হয়েছিলেন, এবং প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসক তাকে জানিয়েছিলন তার হাতে আর বড়জোর - মাস আছে। এটা সেই সময় ছিল যখন তিনি মৃত্যু কে খুব কাছ থেকে অনুভব করতে পারছিলেন, এবং সবচেয়ে বড়ো সিদ্ধান্ত গুলি তৎক্ষণাৎ নিয়েছিলেন যাতে তার পরিবারকে হঠাৎ অপ্রস্ততিতে না পরতে হয় যদিও ডাক্তার পওে নিজের ভুল অনুমান বুঝতে পারেন এবং লক্ষ্য করেন স্টীভের যে ধরনের ক্যান্সার ছিল তার সার্জারি দ্বারা আরোগ্য সম্ভব। স্টীভ এর অপারেশন হয় এবং যথার্থই তিনি মারণ রোগের ফাড়ার কাটিয়ে ওঠেন মৃত্যুকে এত কাছের থেকে দেখে তার যে দার্শনিক উপলব্ধি হয়েছিল, তা তিনি সকলকে বলেন। তার ভাষায়

 

মৃত্যু হল জীবনের দ্বিতীয় সেরা আবিস্কার, যা জীবন পরিবর্তন আনে, নতুন কে জায়গা ছেড়ে দেয়, সুযোগ দেয় এগিয়ে যাওয়ার

--------স্টীভ্ জবস--------

 

স্টীভ জবস যে একজন অসামান্য ব্যক্তিত্ব তা তার সারা জীবনের কর্মশৈলী তেই প্রমাণিত। কিন্তু তার কথা এবং প্রকাশেও তার প্রতিফলন মেলে।

একেবারে শেষ পর্বে স্টীভ, তার যুবা বয়সে পড়া স্টুয়ার্ট ব্রায়ান্ট নামক ব্যাক্তির একটি উদ্ধৃতি কে প্রতিটি সাফল্য কামী মানুষের উদ্দেশ্যে প্রার্থনা স্বরূপ উৎসর্গ করেন, যেটির বাংলা অনুবাদ করলে হয়ত এরকম দারায়... ....

ক্ষুধার্ত থাকো, বোকা থাকো.. তবেই এগোবে...”

 

“Stay Hungry, Stay Foolish”

--------Steve Jobs--------

 

 

 

 

 

 

 

 

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ

People

Responsive Advertisement

Ad Code

Responsive Advertisement